শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
নাস্তার বদলে কাঁচামরিচই চাবিয়ে খান চাঘাটের মোবারক

নাস্তার বদলে কাঁচামরিচই চাবিয়ে খান চাঘাটের মোবারক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি পশ্চিমপাড়া গ্রামে বসবাস মরিচ খান মোবারকের।রাজশাহী জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের গ্রাম হলিদাগাছি, মোবারক মোল্লা (৭০) এ গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের লোকজন তাকে রাজশাহীর চারঘাটে ‘মরিচ খাওয়া মোবারক’ নামেই চেনেন। কারণ, তিনি একটার পর একটা কাঁচামরিচ খান কচমচিয়ে।

আগে লোকেরা মোবারক মোল্লার সঙ্গে মরিচ খাওয়া নিয়ে বাজি ধরতেন। কিন্ত এখন আর কেউ সেই সাহস পান না। কারণ, বাজি ধরলেই নিশ্চিত পরাজয়। মরিচ খাওয়াটা যে তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। একটি বা দুটিও নয়, পেট না ভরা পর্যন্ত মোবারক মোল্লা মরিচ খেতে পারেন। মোবারকের কথায়, তার কাছে মরিচের স্বাদ চকলেটের মতো। তাই কারও বাড়ি বেড়াতে গেলে মোবারক নাস্তার বদলে কাঁচামরিচই চেয়ে খান।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি পশ্চিমপাড়া গ্রামে মোবারকের বাড়ি। তিন মেয়ে আর এক ছেলের বাবা তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন। এখন স্ত্রী, ছেলে, পূত্রবধূ এবং দুই নাতি-নাতনির সঙ্গে থাকেন মোবারক মোল্লা। এক যুগ হলো মোবারক মোল্লা কোনো কাজ করেন না। তবে সেই ছেলেবেলায় যে মরিচ খাওয়ার নেশাটা জন্মেছিল তা এখনও আছে। শুধু মরিচ খাওয়ার এই ক্ষমতার কারণে গ্রামের সব মানুষই তাকে চেনেন।

সম্প্রতি হলিদাগাছি বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রেতা রইস উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় মোবারক মোল্লার বাড়ির ঠিকানা। তিনি চিনতে পারলেন না। গ্রামে মরিচ খান এমন কেউ আছে কি না জানতে চাইলেই একগাল হেসে রইস উদ্দিন বললেন, ‘ওই মরিচ খাওয়া মোবারক মোল্লা। আরেকটু সামনেই তার বাড়ি।’ হলিদাগাছি বাজার থেকে রেললাইন পার হয়ে আরেকটু সামনে গেলেই একটা চায়ের দোকান। দোকানে বসে থাকা লোকজন দেখিয়ে দিলেন মোবারকের বাড়ি।

বাড়িতে যাওয়ার পর মরিচ খাওয়ার আয়োজন করা হলো। মোবারক মোল্লার বাড়ির উঠানে প্রতিবেশীদের ভিড় জমে গেল। এক থালা কাঁচামরিচ বের করে দিলেন পূত্রবধূ নাসিমা বেগম। কচমচিয়ে চিবিয়ে একটার পর একটা মরিচ খাওয়া শুরু করলেন মোবারক। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই কমপক্ষে এক কেজি মরিচ সাবাড় করলেন তিনি। এবার বাঁধা দিলেন স্ত্রী জাহানারা বেগম। বললেন, বয়স হয়েছে। থাক আর খেতে হবে না। পেটের সমস্যা হতে পারে।

মরিচখাদক মোবারক থামলেন। তারপর একটা হাসি দিলেন। এ হাসিতে প্রমাণ করলেন নিজের মরিচ খাওয়ার সক্ষমতার কথা। মোবারক মোল্লা কাঁচা মরিচকে বলে থাকেন ‘গাছ মরিচ’। এতগুলো মরিচ খেতে কেমন লাগলো জানতে চাইলে তিনি বললেন, লজেন্সের মতো। ঝাল লাগে না। জবর লাগে।’
মরিচ খেয়ে কোনো সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে মোবারক বলেন, ‘আমি অসুস্থ হই না, মরিচ খেলেই আমার সব অসুখ ভাল হয়ে যায়।’

মরিচ খাওয়ার শুরুর গল্পটাও শোনালেন মোবারক। তার ভাষ্যমতে, ছোটবেলায় একদিন মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একটা গাছে দেখেন অনেক বড় বড় কাঁচামরিচ। মোবারক একটা মুখে দেন। তারপর দেখেন, ঝাল লাগছে না। নিজেই অবাক হন মোবারক। যারা সঙ্গে ছিলেন তাদের বিষয়টি জানালেন মোবারক। কেউ বিশ্বাস করতে চাইল না। তারা চ্যালেঞ্জ করে বসল। মোবারক তাদের মরিচ খেয়ে দেখিয়ে দিলেন। সেই থেকেই শুরু এভাবে মোবারকের প্রিয় খাবারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে কাঁচামরিচ।

মোবারক বলেন, আমি এখন পর্যন্ত একবসায় সর্বোচ্চ দুই কেজি মরিচ খেয়েছি। এর বেশিও পারব। কিন্তু কেউই সাহস করে দেয় না। প্রথম প্রথম খেতে দিত সবাই। এখন সবাই জানে, তাই আর কেউ খেতে দেয় না। বাজারের সবজি বিক্রেতারা আগে বলত, যত পারেন খান। এখন দেয় না।

তিনি বলেন, একবার গাছমরিচের দাম ২০০ টাকা কেজি হলো। তখন বাড়িতে কেউ খেতে দেয় না। আবার কোন বাড়িতে গিয়ে চাইলেও দেয় না। আমার তো মরিচ না খেলে ভাল লাগে না। তাই একদিন এক দোকানে গিয়ে বললাম, আপনার দোকানের মরিচ দেখেই মনে হচ্ছে ঝাল না। দোকানদার বললেন, ঝাল না তো একটা খেয়ে দেখেন। তখন আমি একের পর এক খেতে লাগলাম। একটু পর দোকানদার আর খেতে দিলেন না।

মোবারক মোল্লার স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আমার বিয়ের আগে থেকেই শুনেছি মরিচ খেতে পারে। তখন বিশ্বাস করতাম না। বিয়ের পরে দেখলাম সত্যিই তাই। সবসময়ই মরিচ খায়। পুত্রবধূ নাসিমা বেগম বলেন, আমার বাপের বাড়ি নাটোরের সিংড়া। আমার শ্বশুর সেখানে গেলে নাস্তা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বলেন, মরিচ থাকলে দেন। তিনি মরিচই খান। এখন এই এলাকার সবাই আমাকে ‘মরিচ খাওয়ার বেটার বউ’ বলে চেনে।

মরিচ খেয়ে দেখিয়ে বাজিতে সবাইকে পরাজিত করে আনন্দ পান মোবারক। কিন্তু এখন আর কেউ মোবারকের সঙ্গে বাজি ধরেন না। মোবারক বলেন, একবার এক বাড়িতে মরিচ খেতে চাইলাম। কয়েকটা খাওয়ার পর বাড়ির লোকজন বলল, আমি নাকি গিলে খাচ্ছি। তাই বললাম পাটায় মরিচ বেটে আনতে। তারা আনল। সেই মরিচও খেয়ে দেখালাম। এখন কেউ ভুল করেও মরিচ খাওয়া নিয়ে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে না। মরিচই আমার ভাল লাগে। স্ত্রীর দিকে ইশারা করে মোবারক বললেন, ও এখন বেশি খেতে দেয় না।

মোবারক মোল্লাকে মরিচ কেন ঝাল লাগে না জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ আনসিয়া পারভিন সুরভি বলেন, কাঁচামরিচে ক্যাপসাসিন নামে একটি পদার্থের উপস্থিতির জন্য ঝাল লাগে। মানুষের জিহ্বার প্রতি মিলিমিটারে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার স্বাদগ্রন্থি থাকে। এই স্বাদগ্রন্থির মাধ্যমে ক্যাপসাসিন ভেতরে ঢুকে ঝাল লাগে। কিন্তু জিহ্বায় স্বাদগ্রন্থি কম থাকলে ঝাল কম লাগবে। যেমন পাখিদের জিহ্বার প্রতি মিলিমিটারে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ স্বাদগ্রন্থি থাকে। তাই তাদের ঝাল লাগে না।

মতিহার বার্তা ডট কম  ১৯ আগস্ট  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply